Home ইসলাম ও জীবন নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায়

নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায়

80
0

ডেস্কঃ নামাজ এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। এই ইবাদত আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলার এক অনন্য মাধ্যম। মুমিন জীবনের অন্যতম ইবাদত হলো- নামাজ, এটা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ; কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে।’ -সুনানে তিরমিজি

দৈনন্দিন জীবনে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নানাবিধ চিন্তা-ভাবনা ও অলসতা কারণে নামাজে অমনোযোগীতা বাড়ে। এর প্রধান কারণ নামাজে একনিষ্ঠতার অভাব ও মনোযোগ না থাকা। একনিষ্ঠতা ছাড়া নামাজ আল্লাহ কবুল করবেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমারা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আমার ইবাদত করো।’ -সুরা বাইয়্যিনাত : ০৫

ইসলামি স্কলাররা নামাজে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধনে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন।

১. অন্তরে এটা অনুভব করা, এই ওয়াক্ত নামাজই আমার শেষ নামাজ। মৃত্যু এমন একটি বিষয়, যা কখন আসে- বলা যায় না৷ নামাজে যখন দাঁড়াবে, তখন এটা অনুভব করতে হবে- এটাই আমার বিদায়ী নামাজ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি নামাজে দাঁড়াও, তখন তুমি বিদায়ী নামাজ পড়ো।’ -মুসনাদে আহমদ

. নামাজের সময় এটা অনুভব করা, নামাজ হলো- আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের মাধ্যম। নামাজের মাধ্যমে বান্দা ও মনিবের মাঝে কথা বলা যায়। যদিও সেটা আমাদের সাধারণ কানে শোনা যায় না, তবুও এই মনোভাব ধারণ করতে হবে অন্তর দ্বারা, আমরা কথা বলছি মহান আল্লাহর সঙ্গে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বান্দা যখন নামাজ পড়ে তখন তা আমি আধাআধি ভাগ করি এবং তার কথার উত্তর দিয়ে থাকি।’ -সহিহ বোখারি

বান্দা যখন বলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এই বিশ্বজগতের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা করছে। এভাবে তিনি প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে থাকেন। এই অনুভূতি অন্তরের মধ্যে লালন করতে পারলে নামাজে মনোযোগ বাড়বে।

৩. ধীরস্থির হয়ে নামাজ আদায় করা। নামাজ মুমিন জীবনে সবরের (ধৈর্য) শিক্ষা দেয়। নম্রভদ্র হয়ে বিনয়ের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা তাদের নামাজে বিনয় অবলম্বন করে।’ -সুরা মুমিনুন : ০২

যত্নসহকারে নামাজ আদায় না করলে নামাজে মনোযোগ সাধন হবে না। কেরাত, রুকু ও সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর ওই ব্যক্তি যে, ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ে না ও রুকু সেজদায় দেরি করে না।’ -তাবারানি

শুধু রুকু-সিজদা নয়, নামাজের তাসবিহ-তাহলিলগুলো অর্থসহ জানার মাধ্যমে ধীরস্থিরভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। যার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ থাকবে না।

৪. নামাজের সময় এটা অনুভব করা, আমি আল্লাহর সঙ্গে দেখা করছি। আল্লাহতায়ালা সার্বক্ষণিক আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন, কিন্তু দুনিয়ার কোনো চোখ দ্বারা তাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। নামাজের ক্ষেত্রে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।’ -সহিহ বোখারি

আল্লাহর সামনে যখন মাথানত করতে হয়, তখন এই ভয়ে করতে হবে- তিনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। পৃথিবীর সব চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়, কিন্তু আল্লাহর চোখ কখনও ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। বান্দা যখন সেজদা দেয় তখন, আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদা দেয়। সুতরাং এক্ষেত্রে খুবই সজাগ থাকতে হবে। এই অনুভব হৃদয়ে লালন করতে পারলে, নামাজে মনোযোগ বাড়বে।

৫. নামাজে মনোযোগ বাড়ানো সর্বশেষ কৌশল হলো, পূর্ববর্তী লোকদের থেকে শিক্ষাগ্রহণ। পূর্ববর্তী লোক হলো- সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িন ও ইসলামি স্কলাররা। কারণ, তারা সর্বত্র আল্লাহকে বেশি ভয় করে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন, সাহাবারা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের থেকে ধারাবাহিকভাবে আলেমরা শিক্ষালাভ করেছেন। তাদের এই শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারলে নামাজে একাগ্রতা, বিনয়ীভাব ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ লাভ সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here